নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় (সেজান জুস) অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জনের মৃত্যুর ঘটনার ৮ দিন আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অপরাধে দায়েরকৃত মামলায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক (এমডি) এম এ হাসেম ও উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের শ্রম আদালত। একই সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ১ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জ শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান কিরন শংকর হালদার এই রায় ঘোষণা করলেও মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় বৃহস্পতিবার ২২ আগস্ট প্রকাশ করা হয়।
মামলার বাদি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের শ্রম পরিদর্শক নেছার উদ্দিন এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ২০২১ সালের ৮ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় (সেজান জুস) অগ্নিকাণ্ডে ৫৪ জন নিহত হয়। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঠিক ৮ দিন আগে ২০২১ সালের ৩০ জুন শ্রম আইনের ৯টি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে আমি বাদী হয়ে ঢাকার শ্রম আদালতে একটি মামলা (২১২/২০২১) দায়ের করেছিলাম। যাতে অভিযুক্ত করা হয়েছিল কারখানার মালিক (চেয়ারম্যান+এমডি) এম এ হাসেম ও উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মামুনুর রশিদকে। ওই মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছিল, করোনা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কারখানায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কারখানার পূর্ব দিকের ছয়তলার কক্ষে নির্মল বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা না থাকা, পরিদর্শক কর্তৃক কাজের সময়সূচির নোটিশ অনুমোদন না করা, কার্যকর সেফটি কমিটি না থাকা, যন্ত্রপাতি স্থাপনের ক্ষেত্রে দেয়াল থেকে দেয়ালের দূরত্ব এক মিটার না রাখা, অনুমোদিত নকশার সঙ্গে বর্তমান কারখানার মেশিন আউট-লেট প্ল্রানের সামঞ্জস্য না থাকা, বর্তমান শ্রমিক সংখ্যানুপাতে লাইসেন্স ক্যাটারি সঠিক না থাকা এবং ভবনের ভেতরে বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা।’
ঢাকার শ্রম আদালতে দায়েরকৃত মামলাটি কয়েক মাস পূর্বে নারায়ণগঞ্জ শ্রম আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছিল যার নাম্বার ২৮৭/২০২৪। ওই মামলায় গত ২ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ শ্রম আদালতের বিচারক আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারী করেছিলেন। সর্বশেষ গত ১ আগষ্ট শ্রম আদালতে মালিক এম এ হাসেম ও ডিজিএম মামুনুর রশিদকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের রায় প্রদান করেন। ২২ আগষ্ট মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন শ্রম আদালত।
উল্লেখ্য, এর আগে অগ্নিকান্ডে নিহত ৫৪ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ(সিআইডি) প্রায় দুই বছর পর অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে। অভিযোগপত্রে কারখানার মালিকসহ তার ৪ পরিচালক ছেলেদেরকে অব্যাহতি দিয়ে প্রতিবেদন দেয়া হয়। কারখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিজিএমসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দেয়া হয়। কারখানার মালিকদেরকে বাদ দেয়া এবং লাইসেন্স নবায়ন প্রদানকারী ২ সরকারী কর্মকর্তাকে রাজস্বাক্ষী করায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ফলে মামলার মূলহোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তৎকালীন ভূলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন আহমেদ ৮ জনকে আসামী করে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে ছিল।